উত্তর ২৪ পরগনা: মঙ্গলবার পদত্যাগের ইচ্ছা, বুধবার সকালে অবস্থান বদল, বিকেলে মহকুমাশাসকের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠালেন মলয় রায়। ইস্তফাপত্র পাঠানোর পরেই ফের ‘খেলা শুরু’ মন্তব্য !তিনি বলেন ‘কালকে বলেছিলাম খেলা শুরু হয়েছে, এখন অনেক খেলোয়াড় জার্সি পরতে পারছে না। সামনের সপ্তাহে মাঠে প্রকাশ্য খেলা চলে আসবে’, ইস্তফা দেওয়ার পর ফের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য তৃণমূল নেতা পানিহাটির পুরসভার পদত্যাগী চেয়ারম্যানের।মূলত পানিহাটি পুরসভার মদতে প্রায় ৮৩ বিঘা জমিতে প্রোমোটার-রাজের অভিযোগ। পানিহাটিতে অমরাবতী মাঠ নিয়ে বিতর্ক, পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী । মলয় রায়কে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানান পুরমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে পরে ফের ফোন করেন ফিরহাদ হাকিম, রাতে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ইস্তফার কথা জানান মলয়। কিন্তু ফের অবস্থান বদল করেন পানিহাটি পুরসভার পদত্যাগী চেয়ারম্যান। বুধবার ফের অবস্থান বদল করে মহকুমাশাসকের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান মলয় রায়।
মঙ্গলবার পানিহাটি পুরসভার পুরপ্রধান মলয় রায় বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধটাই আমার কাছে এসেছে, সেটাকেই আমি চিন্তা করছি। উনি চান আমি পদত্যাগ করি। চক্রান্ত তো অবশ্যই, অবশ্যই চক্রান্ত। তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে বলে দাবি করলেও রাতে পুরমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিলেন পানিহাটির পুরপ্রধান।অবৈধভাবে এলাকার অমরাবতী মাঠ তুলে দেওয়া হচ্ছে প্রোমোটারদের হাতে। পুরসভার ১২৫ বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষে কুপন ছাপিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। তলানিতে ঠেকেছে পুরপরিষেবা।
এক কথায় অভিযোগের পাহাড়! পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায়কে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে এসেছিল শাসক দলের কোন্দল।পানিহাটি পুরসভার পুরপ্রধান মলয় রায় বলেছিলেন, ‘আমি ববি হাকিমকে বলেছি যে, আমার কী অপরাধ, কী অন্যায় করলাম যে, আমাকে পদত্যাগ করতে হবে- সেটা জানতে পারলে ভাল হয়। কিন্তু যেহেতু দলীয় ব্যাপার, দলের সর্বোচ্চ নেত্রী যখন কোনও কথা বলছেন, তাঁকে সম্মান দিয়েই আমি বলছি, পদত্যাগের ব্যাপারটা আমি নিশ্চয়ই চিন্তা করব।’
যে জমি ঘিরে বিতর্ক, সেই জমিটি রয়েছে Society for protection of children in india নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে। তাদের দাবি, ১৯৩৯ সালে ৮৩ বিঘা ওই জমিটি কেনা হয়। জমিতে ছিল একটি বয়েজ হস্টেল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অভিযোগ, ধীরে ধীরে হস্টেল সহ ওই দমি দখল হয়ে যায়। জমিতে তৈরি হয় দোকানপাট। নতুন করে জমি ফিরে পেতে, পুলিশ, পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয় সংগঠনটি। তাদের দাবি, কোনও আবাসন নয়, জমিতে তৈরি হবে নার্সিংহোম, হাসপাতাল ও হস্টেল। Society for protection of children in India এর সম্পাদক সৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, জায়গাটা কাউকে বিক্রি করা হচ্ছে না। অপপ্রচার হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে যা যা জানতে চাওয়া হয়েছে। তা জানানো হয়েছে।
পুরসভার দাবি, সংগঠনের হাতে জমিটি তুলে দিতেই তা পরিষ্কার করা হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, অমরাবতী মাঠ প্রোমোটারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।ঘটনার নেপথ্যে দলের এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে চক্রান্তের তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন পুরপ্রধান। প্রকাশ্যে এসেছে, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। মঙ্গলবার পানিহাটি পুরসভার পুরপ্রধান মলয় রায় বলেছিলেন, ‘একটা বিভ্রান্তিমূলক ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা এই ঘটনাটা ঘটাল, তারা এইভাবে ঘটাতে থাকলে মুখ্যমন্ত্রীরই মুশকিল হবে, আমাদের কিছু হবে না। এরা তো অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মুখোশ পরেসুন্দরভাবে রূপটাকে ভাল রেখেছে। চক্রান্ত তো অবশ্যই, অবশ্যই চক্রান্ত। চক্রান্ত করছে আমাদের লোকজন করছে, আমাদের লোকজনই করছে। কোনও একজন প্রভাবশালী নেতা, আমাদের দলেরই, তিনি এটাকে মদত দিয়েছেন। তাঁর মদতেই এটা হল।’